মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্যে ওজন হ্রাস ও নকল পণ্যের বিপণন বন্ধে সিআরবি’র আবেদন সিম একটিভেশন রিচার্জ ব্যতীত অন্যান্য সকল রিচার্জের মেয়াদ বাতিল করে গ্রাহক সুরক্ষার জন্য বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে সিআরবি’র আবেদন। অসাধু ও ভেজালকারীদের উৎসাহিত করছে ! সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ফেসবুক মন্তব্য সিআরবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার উদ্যোগে কেরানিহাট বাজার পর্যবেক্ষণ “সিআরবি’র নরসিংদী জেলা কনজিউমার এক্টিভিস্ট স্মারক সম্মাননা-২০২৫” সম্পন্ন আপনার নামে কয়টি সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে জানবেন যেভাবে ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলন-সিআরবি’র শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখা বাজার পর্যবেক্ষণ ঘুসের লাখ টাকা ফেরত দিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলন-সিআরবি’র সাতক্ষীরা জেলা শাখা কমিটির শপথ অনুষ্ঠাণ সম্পন্ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার উদ্যোগে : সিআরবি বাজার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম।

মেধাবী ডলির পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০
  • ২০৮৮ বার পড়া হয়েছে

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) এসএম জামাল আহমেদ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেধাবী ডলি খাতুনের শিক্ষা জীবন অব্যাহত রাখতে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবার(৪ জুন) দুপুরে ইউএনও অসহায় ডলির হাতে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করেছেন। আগামীতে তার পরীক্ষাকালীন সময়ে ও পরীক্ষা পরবর্তী ভর্তিতেও তিনি তাকে সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন।

ডলির খাতুনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজাতে এক দরিদ্র ঘরে জন্ম হয় তাদের দুবোনের। বাবা সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন। তাই সংসারে অভাব আর অশান্তি ছিল নিত্যসঙ্গী। সে যখন মায়ের কোল ছাড়েনি সেই বয়সে বাবা- মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

মায়ের সাথে ডলির এবং তার বড় বোনের আশ্রয় হয় নানীবাড়ি, সাঁথিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামে। এরপর ডলির নানা- নানী তার মাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন। সেখানে শিশু ডলির আশ্রয় জোটেনি। ডলি হয়ে যায় আরো অসহায়। প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন। সে বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।

ডলি যখন ৫ম শ্রেণিতে তখন তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায় বনগ্রাম এলাকাতেই। ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট বোনের পড়ার আগ্রহ দেখে তাকে কাছে নিয়ে যায় বড় বোন। এরপর থেকে ডলির আশ্রয় জোটে বোনের বাড়িতে। সেখানে থেকে ২০১২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় সে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পায়। ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে ডলি। নানা সমস্যার মধ্যেও সে ৯ম শ্রেণিতে সায়েন্সে ভর্তি হয়। প্রাইভেট খুব একটা পড়া হয়নি। যেটুকু পড়েছেন সেটা স্যারদের বদান্যতায়, বিনা অর্থে। এজন্য শিক্ষকদের প্রতি ডলির অশেষ কৃতজ্ঞতা। এসএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে সে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখে।

এরপর আর্থিক সমস্যার মধ্যেও সে মিয়াপুর হাজী জসীম উদ্দিন হাইস্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। আর্থিকসহ নানা সীমাবদ্ধতার জন্য সহপাঠীদের তাল মিলিয়ে চলা তার জন্য ছিল কঠিন। সব দু:খ চাপা দিয়ে পড়াশোনায় অবিচল থাকে ডলি। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার আগেই তার জীবনে আরেকটি পরীক্ষা এসে হাজির হয়। তার দু:সময়ে আশ্রয়দাতা দুলাভাই অকালে মারা যান। ডলি জানায়, গত বছর (২০১৯) জুন মাসে তার দুলাভাই মারা যান। এতে যে বোনটি ছিল তার আশ্রয়দাতা সে বোনই হয়ে পড়েন আশ্রয়হীন। ডলির জীবন ও শিক্ষাজীবন আবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়। এরপর তার এক খালুর বাড়িতে আশ্রয় জোটে। এখন পর্যন্ত ডলি ওই বাড়িতেই রয়েছে।

সম্প্রতি অদম্য মেধাবী ডলির কথা সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদ জানতে পারেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই অসহায় ছাত্রীর জন্য সহায়তার কথা বলেন। ওই ছাত্রীর প্রতিষ্ঠান মিয়াপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা ড. শাহনাজ পারভীন এর মাধ্যমে ডলির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন ইউএনও। ইউএনও এসএম জামাল আহমেদ ডলি ও তার আত্নীয়দের জানান, তার শিক্ষা জীবন যেন বন্ধ বা তার উচ্চ শিক্ষা ব্যাহত না হয় সেজন্য তিনি ডলিকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করবেন। বৃহস্পতিবার ইউএনও ডলির হাতে খাদ্যদ্রব্যসহ নগদ টাকা তুলে দেন। এছাড়া দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি আসার পর যখনই এইচএসসি পরীক্ষা হবে তখন তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তার কথা জানান।

ডলি জানায়, ‘ইউএনও স্যারের এমন মহানুভবতায় আমি অত্যন্ত খুশি। তিনি আমার অসহায় অবস্থার কথা জানতে পেরে আমাকেই খুঁজে নিয়েছেন। সহায়তা করেছেন। এমনকি আমার এইচএসসি পরবর্তী ভর্তিকালীন সময়েও তিনি সহায়তার কথা আগাম জানিয়ে রেখেছেন। ডলি বলেন, ইউএনও স্যারের উৎসাহ আমার অনেক কষ্ট লাঘব করেছে। কারণ এইচ পরীক্ষা এবং পরীক্ষার পর আমার ভর্তি ইত্যাদি নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। আমি এখন অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়ে উৎসাহিত। সবার দোয়া থাকলে আমি এইচএসসিতেও ভাল ফল করব বলে আশাবাদী।’

মিয়াপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা (জীব বিজ্ঞান) ড. শাহনাজ পারভীন জানান, ‘ডলি খাতুন আমার সরাসরি ছাত্রী। আমার জীববিজ্ঞানে সে সবার চেয়ে বেশি নম্বর পায়। অন্যান্য বিষয়েও ভাল ফল করছে। তার এইচএসসি পরীক্ষা ভাল হবে বলে শিক্ষকরা আশাবাদী।’ তিনি জানান, ‘এ মেয়েটি অনেক বিনয়ী, নম্র ও পরিশ্রমী।’ তিনি জানান, ‘ইউএনও স্যারের শিক্ষার প্রতি এমন আগ্রহ ও মানবিকতায় আমি একজন শিক্ষক হিসেবে মুগ্ধ।’

সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এর আগে উপজেলার শিবরামপুরের সোনিয়া খাতুন নামের এক মেধাবী ছাত্রী অর্থাভাবে এডওয়ার্ড কলেজে অর্থনীতিতে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছিলেন না। তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভর্তির ব্যবস্থা করেন। সাঁথিয়া পাইলটের ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করা সালমা খাতুনকে অর্থ সহায়তা দিয়ে তাকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির ব্যবস্থা করেন ইউএনও।

এছাড়া পুরানচর গ্রামের হালিমা খাতুনের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় অর্থাভাবে। তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আবার পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। সাঁথিয়া পৌর সদরের ৯ নং ওয়ার্ডের রফিকুল ইসলাম নামের এক দরিদ্র ছাত্রের পড়াশোনা অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাকে আবার পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনেন। এরকম অর্ধশতাধিক ছাত্র- ছাত্রীর শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন ইউএনও।

এ প্রসঙ্গে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদ জানান, তিনি সব সময়েই চেষ্টা করেন অর্থাভাবে যেন কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয়। তিনি বলেন, সাঁথিয়াতেও যোগদান করেই আমি বলেছিলাম, অর্থাভাবে কারো পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয় সেটি তিনি নিশ্চিত করতে চাই। তিনি জানান, পর্যবেক্ষণ করেছি অর্থাভাবে মেয়েদের লেখাপড়া বেশি বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি জানান, এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হ’ল- আমার ব্যক্তিগত ও সরকারি সহযাগিতায় অন্তত: একশ’জন দরিদ্র ছাত্র- ছাত্রীকে সহায়তা করব। যাদের অর্থাভাবে পড়াশোনা বিঘ্নিত বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, তাদের এটুকু সাহায্য করে তাদের প্রতিভার কিছুটা স্বীকৃতি দিতে পারছি। তারাও একদিন প্রতিষ্ঠিত হলে অনেককে সহায়তা করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউএনও।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved
Design by: SELF HOST BD
themesba-lates1749691102