বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১১:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নরসিংদী জেলা শাখার কমিটি গঠন: সভাপতি মনজুর এলাহী সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান মানিক; সিআরবি’র উত্তর জেলা ও সীতাকুণ্ড পৌরসভা শাখার কমিটির  শপথ গ্রহণ নরসিংদী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ CRB অভিযান আশুলিয়ায় একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি জামান মীর সংগঠিত করছেন আ.লীগ সৌরভ হোসেনকে আরটিভি হতে বহিষ্কার সিআরবি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার মাসিক সভা অনুষ্ঠিত বেকার এখন ২৫ লাখ ৯০ হাজার : দেশে নারীর চেয়ে পুরুষ বেকার বেশি মিলাররা চালের বস্তায় দাম লিখতে চান না যে কারণে বিএসটিআই থেকে ২২ প্রতিষ্ঠানকে আইএসও সনদ প্রদান পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত

পাহাড়ে বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব

সংবাদ দাতার নাম
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩৭২ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক :

পাহাড়ে বর্ষবরণ ও বিদায়ের মহান উৎসব ‘বৈসাবি’ ঘিরে নানান সাংষ্কৃতিক আয়োজনের পর এবার শুরু হয়েছে উৎসবের মূল আয়োজন। আজ সকালে শহরর তিনদিক ঘেরা কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন স্থানে চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, তংচঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির গঙ্গাদেবী ও জলবুদ্ধ’র উদ্দেশ্যে নিবেদন করে প্রার্থনা  আর পূজোর ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের প্রধান তিন দিনের আয়োজনের প্রথম দিন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত এখন শহর, নগর আর পাহাড়ি গ্রামগুলো। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে নতুন বছরের জন্য শুভকামনা জানিয়ে গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করা হয়।

শুক্রবার চাকমা জনগোষ্ঠীর ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবৈসু’ আর মারমা সম্প্রদায়ে সূচিকাজ। ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সকল পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীই পানিতে ফুল ভাসানোর আনুষ্ঠানিকতা পালন করে।

ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ফুলবিজু উপলক্ষে শহরের রাজবনবিহার ঘাট, গর্জনতলী মধ্যদ্বীপ, কেরাণী পাহাড়সহ বিভিন্ন স্থানে বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন কমিটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানিতে ফুল ভাসানো হয়।

চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব।

উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং কলাপাতা করে পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে, তাই একে বলা হয় ফুল বিজু। পানিতে ফুল ভাসিয়ে নিজ পরিবার এবং দেশ তথা সমগ্র জীবের মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর নিকট প্রার্থনা করা হয়। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেনো ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালান পাহাড়ের বাসিন্দারা। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।

ফুল ভাসিয়ে আর্যকুমার চাকমা বলেন, সবাই ফুল ভাসানো বললেও মূলত আমাদের জন্য এটি ফুল নিবেদন। আমরা জল বা পানির প্রতি কৃতজ্ঞতার অংশ হিসেবে গঙ্গাদেবী ও জলবুদ্ধর কাছে ফুল নিবেদন করি। পাশাপাশি প্রার্থনা করি যাতে সারাবছর আমাদের ভালো কাটে। আমাদের পরিবারের সবাই ভালো থাকে।

সুনেত্রা চাকমা বলেন, ফুল বিজুর দিনে ফুল নিবেদন থেকেই থেকেই বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগামীকাল মূল বিজু এবং পরশু পহেলা বৈশাখ পালন করবো। ফুল ভাসিয়ে আমরা গঙ্গাদেবীর কাছে সুখ ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা করি।

বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৪ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ আজকের দিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ফুল ভাসানোটা এখন সম্প্রীতির উৎসবে রুপ নিয়েছে। সবাই একসাথে একত্রিত হয়ে ফুল নিবেদন করে প্রার্থনা করে। আজকের দিনে আমাদের চাওয়া হলো, আগামী দিনেগুলোতে যাতে সবাই মিলেমিশে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকে। বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে সমন্বিতভাবে পালন করা হয় বহু বছর ধরেই। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে একীভূত করার জন্য এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়।

শহরের গর্জনতলীতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির পানিতে ফুল ভাসানোর আয়োজনে উপস্থিত থেকে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির ভিন্ন ভিন্ন নামে আয়োজিত এই উৎসবকে সমন্বিতভাবে বৈসাবি নামেই অভিহিত করার মধ্য দিয়ে  সম্প্রীতির যে বার্তা এবং সকল জনগোষ্ঠির একইসূত্রে গাঁথা অভিন্ন এই আয়োজন পাহাড়ের বৈচিত্রময় সংস্কৃতিকে আরো ঋদ্ধ করে।  সারা বিশ্বের সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করে সবাই যেনো অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিকশিত হতে পারে সেই প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন কাল মূল বিজু। এইদিন বাড়ি বাড়ি বেড়ানো আর খাওয়ার দাওয়া চলবে। আর পড়শুদিন বিশ্রামের দিন বা গইজ্যাপইজ্যা দিন। সেদিন বাঙালীর নববর্ষ পালনে অংশ নিবেন কেউ কেউ  আর কেউ কেউ ঘরে বসে বিশ্রামে কাটাবেন দিনটি। এরপর ১৬ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠির সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হবে বর্ষবরণ ও বিদায়ের পুরো এই আয়োজন।

তথ্যসূত্র : অনলাইন।

এ বিভাগের আরো সংবাদ
©2020 All rights reserved
Design by: SELF HOST BD
themesba-lates1749691102