সিম একটিভেশন রিচার্জ ব্যতীত অন্যান্য সকল রিচার্জের মেয়াদ বাতিল করে গ্রাহক সুরক্ষার জন্য বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে সিআরবি’র আবেদন।
আব্দুল আউয়াল
প্রকাশের সময় :
রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫
২১০
বার পড়া হয়েছে
ডেস্ক নিউজ :
গত ০৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকাল ১২টায় ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলন – ভলান্টারিমুভমেন্টকাউন্সিলঅবকনজিউমাররাইটসবাংলাদেশ (সিআরবি)–এর উদ্যোগে “সিম একটিভেশন রিচার্জ ব্যতীত অন্যান্য সকল রিচার্জের মেয়াদ বাতিল করে গ্রাহক সুরক্ষার জন্য” বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন দাখিল করা হয়।
আবেদনপত্র হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন সেলফ এইড ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আ. হ. ম. কামরুজ্জামান চৌধুরী, সিআরবি জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগ) সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবুল হাশেম, সিআরবি’র মহাসচিব ডিজাইনার কেজিএম সবুজ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জনাব মো: আব্বাস উদ্দীন ধ্রুব প্রমুখ।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে কর্মরত মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সাথে গ্রাহকদের সম্পর্ক মূলত “সিম ক্রয় ও ব্যবহার”-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। গ্রাহকরা অপারেটর কোম্পানির কাছ থেকে সিম সংগ্রহ করে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কল, এসএমএস ও ডাটা সেবা ব্যবহার করে থাকেন। তাই মোবাইল অপারেটরদের তাদের সিম একটিভ রাখার জন্য মাসিক ভিত্তিতে “সিম একটিভেশন রিচার্জ” নির্ধারণ করা যৌক্তিক।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অপারেটররা সকল প্রকার রিচার্জের মাধ্যমেই মেয়াদ (Validity) নির্ধারণ করছে, যা ভোক্তা স্বার্থের পরিপন্থী। সিম একটিভেশন রিচার্জ ছাড়া অন্য যে কোনো রিচার্জে মেয়াদ চাপিয়ে দেওয়া কার্যত গ্রাহকের স্বাধীনতা হরণ এবং ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন। অনেক সময় গ্রাহকদের রিচার্জকৃত টাকা, এমবি বা কল টাইম অকারণে বাতিল হয়ে যায়। তদুপরি, বিভিন্ন প্যাকেজে এমবি ও কলটাইম অফার দেওয়া হলেও রিচার্জের পর অনেক গ্রাহক এমবি পান কিন্তু কল টাইম পান না। সময়ের অভাবে অনেকের পক্ষে এসব অভিযোগ জানাতে অপারেটরদের সার্ভিস সেন্টারে যাওয়া সম্ভব হয় না। এই সুযোগে মোবাইল অপারেটররা প্রতিমাসে গ্রাহকের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তাই গ্রাহক সুরক্ষায় সিআরবি মোবাইল গ্রাহকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছে, যা প্রতিমাসে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাহক লুণ্ঠনের তথ্য প্রকাশ করবে এবং সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
একজন মোবাইল গ্রাহক সিম ক্রয় করার পর তার ব্যবহারের ধরন, সময় বা পরিমাণ নিজের ইচ্ছায় নির্ধারণ করবেন—এটি তার মৌলিক অধিকার। কিন্তু অপারেটররা সেই স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যা এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শোষণ।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে কোটি টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে বলেন না, কীভাবে তিনি জীবনযাপন করবেন—রান্না করে খাবেন না হোটেল থেকে খাবেন। একইভাবে ক্রয়কৃত চাল, চিনি, তেলসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে ব্যবহারের মেয়াদ বা সময়সীমা জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয় না। তাহলে মোবাইল অপারেটরদের ক্ষেত্রেই কেন এই অন্যায্য শর্ত বহাল থাকবে?
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ডাটা ও কল রেটে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে। পূর্বে ১৮ থেকে ৩০ টাকায় ৩ থেকে ৭ দিনের ডাটা প্যাকেজ পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে ২৪ ঘণ্টার সীমিত ডাটা প্যাকেজের দাম প্রায় ৯৭ টাকা, যা সাধারণ গ্রাহকের জন্য অযৌক্তিক ও শোষণমূলক। কল রেটেও ক্রমান্বয়ে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিটিআরসি যেহেতু মোবাইল অপারেটরদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তাই ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় তাদের আইনগত ও নৈতিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিআরবি’র পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়ঃ
১. সিম একটিভেশন রিচার্জ ছাড়া অন্য কোনো রিচার্জে মেয়াদ নির্ধারণের নিয়ম বাতিল করা হোক।
২. গ্রাহকের সিম যতদিন সক্রিয় থাকবে, ততদিন তার ব্যালান্স ও প্যাকেজ ব্যবহারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক
৩. আন্তর্জাতিক মান ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের নীতিমালা অনুযায়ী যৌক্তিক কল ও ডাটা মূল্য নির্ধারণ করা হোক।
৪. মোবাইল অপারেটরদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে গ্রাহকবান্ধব প্যাকেজ ও মেয়াদনীতি প্রণয়ন করা হোক।
আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে তখন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত না থাকায় আবেদনপত্রটি ডেপুটি এসিসটেন্ট ডিরেক্টর মো: পিয়ারুল ইসলাম-এর নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সিআরবি’র কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা—বিটিআরসি গ্রাহক সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে, সিম একটিভেশন রিচার্জের নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ ঘোষণা করবে এবং অন্যান্য সকল রিচার্জের মেয়াদ বাতিল করবে। যদি বিটিআরসি গ্রাহক সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও প্রতিবেশী দেশসমূহের কল রেটের আলোকে গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।