ডেস্ক নিউজ :

চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মতিঝর্ণা বাজারে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। আজ ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ক্রেতা সুরক্ষা আন্দোলন–ভলান্টারি মুভমেন্ট, কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ –সিআরবি’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে পরিচালিত বাজার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে এসব অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়।

বাজার পর্যবেক্ষণকালে মুরগির দোকান, মাছের দোকান, শুঁটকির দোকান, কসমেটিকসের দোকান ও খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাজারের বড় সবজি দোকানসহ অধিকাংশ দোকানে ট্রেড লাইসেন্স ও পণ্যের মূল্য তালিকা নেই। শুঁটকির দোকানগুলোতেও ট্রেড লাইসেন্স ও মূল্য তালিকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার বিষয়টি স্বীকার করেন।

খাবার হোটেলগুলোতে পাওয়া যায় আরও উদ্বেগজনক চিত্র। অধিকাংশ হোটেলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই, কর্মীদের স্বাস্থ্য সনদ নেই, নেই ট্রেড লাইসেন্স ও মূল্য তালিকাও। অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার প্রস্তুত ও বিক্রি করা হচ্ছে। হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিয়মিত কোনো বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

এছাড়া বাজারে অবস্থিত ঔষধের দোকানগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও ড্রাগ লাইসেন্স ও অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট নেই। অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঔষধ বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কখনো ঔষধ প্রশাসনের কোনো তদারকি কার্যক্রম দেখেননি।

মুরগির দোকান ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতেও অনিয়মের ছড়াছড়ি। অধিকাংশ দোকানে মূল্য তালিকা ও ট্রেড লাইসেন্স নেই। কসমেটিকসের দোকানগুলোতে নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই বাজারে কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্স ও মূল্য তালিকা ছাড়াই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে—তা দেখে সিআরবি’র ভোক্তা অধিকার কর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

বাজার পর্যবেক্ষণকালে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন–২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় অনেক দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দোকানের তাকেই সাজিয়ে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে বলেও দেখা যায়। সিআরবি’র পর্যবেক্ষক দল এসব অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ নোট আকারে সংরক্ষণ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিআরবি প্রতিনিধিরা ব্যবসায়ীদের জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন–২০০৯-এর ৩৮ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক দোকানে দৃশ্যমান স্থানে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ী এসব আইন সম্পর্কে অবগত নন। অনেক দোকানে সাইনবোর্ড নেই, বিক্রয় রশিদ দেওয়া হয় না, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে পণ্য মজুত এবং উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখবিহীন পণ্য বিপণন করা হচ্ছে।

এ সময় সিআরবি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে নিয়মিত ও কার্যকর বাজার মনিটরিং জোরদারের আহ্বান জানানো হয়। সিআরবি নেতারা বলেন, ভোক্তা সুরক্ষার জন্য সরকার এসব সংস্থা প্রতিষ্ঠা করলেও মাঠপর্যায়ে নৈতিকতা, যোগ্যতা ও জবাবদিহিতার অভাবে কার্যকর তদারকি হচ্ছে না। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাজার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন সিআরবি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মো. নাঙ্গাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহোরাব হোসেন, সিআরবি ব্লাড ডোনার্স ক্যাম্পের সভাপতি রিদুয়ানুল হক সাইমুন, রাকিব উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মো. রুবেল, জুবাইর হোসেনসহ সংগঠনের অন্যান্য কনজিউমার এক্টিভিস্টরা ।